Blog বরেন্দ্রভূমি – Barind / BarendraTract

বরেন্দ্রভূমি – Barind / BarendraTract

| | 0 Comments| 11:34 pm

Geographical and geological characteristics of the Barendra region or Rajshahi division

বরেন্দ্র বা বরিন্দ বাংলার একটি ঐতিহাসিক এবং ভৌগোলিক অঞ্চল, যা প্রাচীন বাংলার পুণ্ড্র এবং গৌড় রাজ্যের অংশ ছিলো, বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহী, রংপুর এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদহ বিভাগের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত।

আলেকজান্ডার কানিংহামের মতে, বরিন্দের সীমানা পশ্চিমে গঙ্গা ও মহানন্দা, পূর্বে করতোয়া, দক্ষিণে পদ্মা আর উত্তরে কুচবিহার এবং তেরাই-এ মাঝে ছিল।

আজও বাংলাদেশের বগুড়া, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, রাজশাহী, রংপুর, নাটোর, নওগাঁ এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদা, উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে বিশেষ লাল রঙের ভূমি প্রকৃতির ও তার বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্যে দেশীয়ভাবে বিভিন্ন নামে ডাকা হয় (যেমন খিয়াড়)। আর এসব এলাকা আজও বাংলার বরেন্দ্রভূমির সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য বহন করে।

বরেন্দ্রভূমি (Barind Tract)  বঙ্গ অববাহিকার বৃহত্তম প্লাইসটোসিন ভূ-প্রাকৃতিক একক। প্রায় ৭,৭৭০ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে বরেন্দ্রভূমি বিস্তৃত। চতুষ্পার্শেতর প্লাবনভূমি থেকে পৃথক এই ভূ-প্রকৃতি পুরাতন পলল গঠিত একটি ভূমিরূপ হিসেবে দীর্ঘ সময় থেকেই স্বীকৃত। বরেন্দ্রভূমির ভৌগোলিক অবস্থান মোটামুটি ২৪°২০´ উত্তর অংক্ষাংশ থেকে ২৫°৩৫´ উত্তর অংক্ষাংশ পর্যন্ত এবং ৮৮°২০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৮৯°৩০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। ভূ-প্রাকৃতিক এই একক পূর্বে করতোয়া নদী দ্বারা, পশ্চিমে মহানন্দা নদী দ্বারা এবং দক্ষিণে গঙ্গা নদীর উত্তর পাড় দ্বারা সীমাবদ্ধ। বরেন্দ্রভূমির পূর্ব প্রান্তে একটি চ্যুতির অবস্থান সুস্পষ্ট এবং চ্যুতিখাদ বরাবর ছোট যমুনা, আত্রাই এবং পুনর্ভবা নদী প্রবাহিত হচ্ছে। এই ভূ-প্রাকৃতিক এককের পশ্চিমাংশ আনত এবং পশ্চিম প্রান্তের অংশবিশেষ অবশিষ্ট ভূ-ভাগ এবং পার্শ্ববর্তী মহানন্দা প্লাবনভূমি থেকে ১৫ মিটারেরও অধিক উঁচু।

বরেন্দ্রভূমি নামকরণ :

বরেন্দ্রভূমির নামকরণের পেছনে একাধিক পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। ‘বর’ শব্দের অর্থ হচ্ছে আশীর্বাদ এবং ‘ইন্দ্র’ শব্দের অর্থ দেবতাদের রাজা। অর্থাৎ ইন্দ্রের বর বা ইন্দ্রের আশীর্বাদ থেকে সাধারণভাবে বরেন্দ্র শব্দটির উৎপত্তি। এই কাহিনীর অনুসারিগণ বিশ্বাস করেন যে, বরেন্দ্রভূমি ইন্দ্রের পক্ষ থেকে আশীর্বাদস্বরূপ। রামায়ণ ও মহাভারত গ্রন্থদ্বয়ে বরেন্দ্রভূমিকে ‘পুন্ড্র’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। পুন্ড্র নামকরণের পেছনেও রয়েছে পৌরাণিক কাহিনী। মহাভারতের বর্ণনা অনুসারে, বলিরাজার পাঁচ সন্তানের মধ্যে একজনের নাম ছিল পুন্ড্র এবং তাঁর নামানুসারে এই ভূমির নামকরণ করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ২১৩ থেকে ২৩২ সালের শিলালিপির বর্ণনা থেকে জানা যায়, সম্রাট অশোকের শাসনামলে বরেন্দ্রভূমিকে তার আদি অধিবাসীদের নামে নামকরণ করা হতো যাদের মধ্যে বিখ্যাত ছিল পারিংদাগন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পারিংদাগন পরিবর্তিত হয়ে ‘বারিন্দা’ নাম ধারণ করে এবং ভূমির নামও তাই হয়ে যায়।

দৈত্যরাজ বলির পত্নী সুদেষ্ণার গর্ভে দীর্ঘতমা মুনির ঔরসে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, ওড্র এবং পুন্ড্র নামে পাঁচটি ক্ষেত্রজ পুত্র জন্মায়। তারা প্রত্যেকে স্বনামখ্যাত এক একটি রাজ্য স্থাপন করেন।
মালদহ জেলার অন্তর্গত পান্ডুয়া নগরের চার পাশের স্থান পুন্ড্রের অধিকারভুক্ত ছিল। তার নাম থেকেই একে পৌন্ড্র এবং এর রাজধানীকে পৌন্ড্রপট্টন বলা হত। কালক্রমে বরেন্দ্র নামের একজন ক্ষত্রিয় পৌন্ড্র রাজ্য জয় করে এই রাজ্যের নাম বরেন্দ্রভূমি রাখেন।[২] যদিও বেশিরভাগ ঐতিহাসিকের মতানুসারে পুন্ড্রের আসল অবস্থান ছিল অধুনা বাংলাদেশের বগুড়া জেলার অন্তর্গত মহাস্থানগড় নগরে।

তথ্যসূত্র:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Post

কেন দিনাজপুরের লিচু খাবেনকেন দিনাজপুরের লিচু খাবেন

  দিনাজপুরের লিচুর ইতিহাস এবং ঐতিহ্য দিনাজপুরের লিচুর ইতিহাস বেশ পুরোনো এবং সমৃদ্ধ। বলা হয়ে থাকে, দিনাজপুরে লিচু চাষের শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ শাসনামলে। স্থানীয় জমিদার ও ব্রিটিশ শাসকরা এ অঞ্চলে

সার সংকট: কারণ ও ফলাফল !সার সংকট: কারণ ও ফলাফল !

চলমান সংকটকালে সারের সংকটে জর্জরিত কৃষকদের সহায়তায় সম্প্রতি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে এগ্রোইনপুটসবিডি। পরিবহন খরচ ও শ্রম ব্যয়সহ বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে এই কৃষকদের সহায়তা করার জন্য কোম্পানিটি অবদান রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই